WB ICDS সমাজকল্যাণ ব্যবস্থায় অঙ্গনওয়াড়ি ও আইসিডিএস কর্মীদের ভূমিকা অপরিসীম। শিশু পুষ্টি, মাতৃসেবা এবং গ্রামীণ এলাকায় স্বাস্থ্যের প্রাথমিক স্তরে এই কর্মীরা নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ করে চলেছেন। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে তাঁরা নানা রকম বঞ্চনা, অবহেলা এবং অস্বীকৃতির শিকার হয়ে আসছেন।
এই লেখায় আমরা বিশ্লেষণ করবো কেন আইসিডিএস কর্মীদের আন্দোলন হচ্ছে, তাদের দাবিগুলি কী কী, সরকার কী বলছে, এবং কীভাবে ভবিষ্যতে তাদের দাবি পূরণ হতে পারে।
আইসিডিএস কর্মীদের ভূমিকা ও বর্তমান অবস্থা
পশ্চিমবঙ্গের গ্রামাঞ্চলে শিশু ও মায়েদের পুষ্টি, স্বাস্থ্য পরীক্ষার প্রাথমিক পর্যায়, টিকাকরণ, ওয়ার্কশপ ইত্যাদি নানা গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন আইসিডিএস কর্মী ও সহায়িকারা। তাঁরা রাজ্য সরকারের অধীন অস্থায়ী ভিত্তিতে নিযুক্ত হলেও তাঁদের কাজের গুরত্ব কোনওভাবেই অস্বীকার করা যায় না।
Read More:- আনন্দধারা নিয়োগ ২০২৫ – বীরভূমে Community Auditor পদে আবেদন
তবে দীর্ঘদিন ধরেই তাঁরা দাবি করে আসছেন যে—
- তাঁরা স্থায়ী কর্মচারী হিসেবে স্বীকৃতি পাচ্ছেন না
- বেতন অতি কম, যা পরিবারের খরচ চালাতে যথেষ্ট নয়
- রিটায়ারমেন্ট বেনিফিট নেই বা অপ্রতুল
- অনেকসময় নতুন নিয়োগও বন্ধ থাকে বছরের পর বছর
WB ICDS মূল দাবিসমূহ
আইসিডিএস কর্মীরা বারবার তাদের দাবির বিষয়ে আন্দোলন, বিক্ষোভ ও ডেপুটেশন জমা দিয়েছেন। তাদের মধ্যে প্রধান কিছু দাবিগুলো হল—
- স্থায়ীকরণ (Regularisation):
আইসিডিএস কর্মীদের চাকরি অনেক বছর ধরে চললেও তারা এখনো অস্থায়ী, যা নিরাপত্তাহীনতার পরিবেশ তৈরি করে। - বেতন কাঠামো সংশোধন:
অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের মাসিক সাম্মানিক মাত্র ৪৫০০-৬০০০ টাকা, যা বর্তমান বাজারে একেবারেই অপ্রতুল। তাঁদের দাবি, অন্তত ₹২৫,০০০ মাসিক বেতন ধার্য করা হোক। - রিটায়ারমেন্ট অনারিয়াম চালু করা:
বর্তমানে ৬৫ বছর পর্যন্ত কাজ করার পর একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ দেওয়া হয়, কিন্তু অনেকেই শারীরিক কারণে ৬৫ বছরের আগেই চাকরি ছাড়তে বাধ্য হন। এতে তারা সেই অর্থ থেকে বঞ্চিত হন। - পেনশন বা মাসিক ভাতা চালু করা:
সরকারি কর্মচারীদের মত তাঁদের জন্যও রিটায়ারমেন্টের পরে অন্তত মাসিক ভাতা চালু করার দাবি উঠেছে। - ভাতা বৃদ্ধি সংক্রান্ত স্বচ্ছতা:
সম্প্রতি সাম্মানিক ভাতা কিছুটা বাড়ানো হলেও অভিযোগ রয়েছে, পরে তা আবার কেটে নেওয়া হয়েছে। যেমন: ₹১০০০ টাকা বাড়িয়ে, পরে ₹৬০০ বা ₹৪০০ কেটে নেওয়া হয়েছে।
মাঠে আন্দোলন ও সম্প্রতি ঘটনা WB ICDS
সম্প্রতি পশ্চিম মেদিনীপুরের গড়বেতা ৩ নম্বর ব্লকে আইসিডিএস কর্মীদের একটি সারক লিপি প্রদান কর্মসূচি হয়। সেখানে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের উপভোক্তা দপ্তরের প্রতিমন্ত্রী শ্রীকান্ত মেহেতা। কর্মীরা সরাসরি মন্ত্রীর সামনে নিজেদের দাবি তুলে ধরেন।
তাঁদের প্রশ্ন ছিল: WB ICDS
“আপনাদের বেতন বাড়ে, এমএলএ, এমপিদের ভাতা বাড়ে, তাহলে আইসিডিএস কর্মীদের ভাতা বাড়াতে এত আপত্তি কেন?”
এই প্রশ্নে প্রতিমন্ত্রী আশ্বস্ত করে বলেন যে, তিনি বিষয়টি উপরমহলে তুলে ধরবেন। এ থেকেই স্পষ্ট, সরকার বিষয়টি আমলে নিতে শুরু করেছে।
সমস্যার গভীরতা
দুঃখজনক হলেও সত্য, বহু আইসিডিএস কর্মী ৬৫ বছরের আগেই বাধ্য হয়ে অবসর নিচ্ছেন। কিন্তু তাঁরা তাঁদের অবদানের জন্য কোনও রকম আর্থিক পুরস্কার পাচ্ছেন না। এই পরিস্থিতিতে একজন কর্মীর ৩০–৩৫ বছরের পরিশ্রমের মূল্য একেবারেই অপ্রতুল।
তাছাড়া সিভিক, আশা কর্মীদের ভাতা বৃদ্ধি হলেও, অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের ক্ষেত্রে উল্টো কমিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। WB ICDS
রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ও আশার আলো
পশ্চিমবঙ্গের পরবর্তী বিধানসভা নির্বাচন খুব দূরে নয়। এর ফলে রাজ্য সরকারের সামনে রয়েছে সংবেদনশীল বিষয়গুলি সমাধানের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সময়। যদি আইসিডিএস কর্মীরা সঠিকভাবে ও শান্তিপূর্ণভাবে তাদের দাবি সংগঠিত করেন, তাহলে তা সরকারি সিদ্ধান্তে প্রভাব ফেলতে পারে।
রাজ্যের শীর্ষ নেতৃত্ব—বিশেষ করে মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ এই পরিস্থিতির গতি পরিবর্তন করতে পারে।
ভবিষ্যতের দিশা
- সরকার যদি পেনশন/ভাতা স্কিম চালু করে, তাহলে এটি হবে একটি বড় পদক্ষেপ।
- স্থায়ীকরণ নীতিমালা নির্ধারণ করলে কর্মীরা দীর্ঘমেয়াদে নিরাপত্তা পাবেন।
- বেতন কাঠামোর পূর্ণ সংস্কার ছাড়া এই পেশায় নতুনরা আগ্রহী হবেন না।
WB ICDS উপসংহার
আইসিডিএস কর্মী ও সহায়িকারা নিঃসন্দেহে সমাজের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। তাঁদের প্রতি যত দ্রুত সম্ভব ন্যায়বিচার ও সম্মানজনক কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। এই দাবিগুলো শুধু তাদের কর্মজীবনের উন্নয়ন নয়, বরং রাজ্যের শিশু ও মাতৃস্বাস্থ্যের ভবিষ্যতের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত।
