ভূমিকা
“সম কাজ সম বেতন” – এটা শুধু একটা স্লোগান নয়, এটা ভারতের কোটি কোটি শ্রমজীবী মানুষের ন্যায্য দাবি। বিশেষ করে অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীরা, যারা গ্রামীণ সমাজে শিশুদের পুষ্টি, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবার মূল ভরসা, তারা এখনও অনারিয়াম বা সামান্য ভাতা পেয়ে থাকেন। অথচ তাদের কাজের গুরুত্ব এবং দায়িত্ব কোনো পূর্ণ সময় সরকারি কর্মচারীর চেয়ে কম নয়। তাই সময় এসেছে তাদের অনারিয়ামের পরিবর্তে স্থায়ী ও সম্মানজনক বেতন দেওয়ার।
অনারিয়াম বনাম নিয়মিত বেতন: মূল পার্থক্য
অনারিয়াম (Honorarium):
- ভাতা হিসেবে দেওয়া হয়।
- কোনো স্থায়ী চাকরির নিশ্চয়তা নেই।
- PF, পেনশন, মেডিকেল ইন্স্যুরেন্স থাকে না।
- সময়মত টাকাও মেলে না অনেক সময়।
নিয়মিত বেতন (Salary):
- নির্দিষ্ট স্কেলের মধ্যে থাকে।
- সময়মত পাওয়া যায়।
- পেনশন, গ্র্যাচুইটি, ইন্স্যুরেন্সসহ সামাজিক নিরাপত্তা থাকে।
- কাজের মর্যাদা বাড়ে।
অঙ্গনওয়াড়িদের বর্তমান অবস্থা ভারতে
বিভিন্ন রাজ্যের তুলনা
- গুজরাট: এখানে অঙ্গনওয়াড়িরা অন্যান্য রাজ্যের তুলনায় তুলনামূলক ভালো বেতন পান।
- পশ্চিমবঙ্গ: এখনও অনারিয়ামের উপর নির্ভর করতে হয়। অনেক সময় বেতন মাসের পর মাস আটকে থাকে।
- হরিয়ানা, মহারাষ্ট্র, কেরালা: কিছু রাজ্যে অঙ্গনওয়াড়িদের অতিরিক্ত ভাতা দেওয়া হলেও, বেতন কাঠামো এখনও সঠিক নয়।
সম কাজ সম বেতন: সংবিধান ও আইনগত দিক
ভারতের সংবিধানের 14, 16 ও 39 ধারায় সমতা ও ন্যায্য মজুরির কথা বলা আছে।
সুপ্রিম কোর্ট একাধিক রায়ে বলেছে, সম কাজ করলে সম বেতন পেতেই হবে। তাহলে অঙ্গনওয়াড়িরা কেন বাদ পড়বেন?
কেন অনারিয়াম যথেষ্ট নয়
- আজকের দিনে ৪-৫ হাজার টাকায় সংসার চালানো অসম্ভব।
- বাজারদর অনুযায়ী বেতন না বাড়ায় পরিবার ভোগান্তিতে পড়ছে।
- সামাজিক নিরাপত্তাহীনতা – পেনশন, স্বাস্থ্যবিমা নেই।
- নারী কর্মীদের মানসিক চাপ বাড়ছে।
Read More:- হুগলি জেলা আশা কর্মী নিয়োগ ২০২৫-২৬
গুজরাট মডেল বিশ্লেষণ
গুজরাটে অঙ্গনওয়াড়িরা তুলনামূলক বেশি বেতন পান এবং কিছু ভাতা সুবিধাও আছে।
- কর্মীদের ন্যূনতম ১৫,০০০ থেকে ২৫,০০০ টাকা দেওয়া হয়।
- স্বাস্থ্যবিমা ও PF সুবিধা রয়েছে।
- কাজের মর্যাদা ও আত্মবিশ্বাস বাড়ছে।
👉 এই মডেল পশ্চিমবঙ্গ ও অন্যান্য রাজ্যে চালু করা হলে, কর্মীরা আর্থিকভাবে স্থিতিশীল হবেন।
স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও সমাজে অঙ্গনওয়াড়িদের অবদান
- শিশুপুষ্টি: গর্ভবতী মা ও শিশুদের জন্য সুষম খাবারের ব্যবস্থা।
- শিক্ষা: গ্রামের শিশুদের প্রাথমিক শিক্ষার ভরসা।
- স্বাস্থ্যসচেতনতা: টিকাদান, স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও পরামর্শ প্রদান।
- নারীর ক্ষমতায়ন: অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীরা গ্রামীণ নারীদের জন্য অনুপ্রেরণা।
অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের সংগ্রাম ও আন্দোলন
বছরের পর বছর অঙ্গনওয়াড়িরা আন্দোলন করছেন।
- সঠিক সময়ে বেতন দাবি।
- সম কাজ সম বেতন দাবি।
- সামাজিক সুরক্ষার দাবি।
এখন তাদের দাবিকে সরকারকে গুরুত্ব দিয়ে মানতে হবে।
আন্তর্জাতিক দৃষ্টিভঙ্গি
- নেপাল: সেখানে আঙানওয়াড়ি ধরনের কর্মীরা মাসিক স্থায়ী বেতন পান।
- বাংলাদেশ: কমিউনিটি স্বাস্থ্যকর্মীদের সরকারি চাকরির মর্যাদা দেওয়া হয়েছে।
- ইউরোপ: প্রি-স্কুল ওয়ার্কারদের সরকারি সুবিধা রয়েছে।
তাহলে ভারতে কেন পিছিয়ে থাকতে হবে?
অঙ্গনওয়াড়িদের ন্যায্য দাবির পক্ষে যুক্তি
- তারা শিশুদের ভবিষ্যৎ গড়ছেন।
- সরকারি প্রকল্প বাস্তবায়নের মূল দায়িত্ব তাদের হাতে।
- স্বল্প বেতনে তাদের উপর নির্ভর করে পুরো ICDS প্রকল্প।
- মর্যাদা ও সঠিক সম্মান না দিলে কাজের মান কমে যাবে।
প্রস্তাবিত বেতন কাঠামো
- সহায়িকা: ন্যূনতম ২২,০০০ টাকা।
- কর্মী: ন্যূনতম ১৮,০০০ টাকা।
- PF, পেনশন, স্বাস্থ্যবিমা ও অন্যান্য সরকারি সুবিধা আবশ্যক।
উপসংহার
অঙ্গনওয়াড়িরা শুধুমাত্র “অনারিয়াম” পেয়ে খুশি নন। তারা চান সম কাজ সম বেতন, চান গুজরাটের মত বেতন কাঠামো, চান সময়মত বেতন।
সরকার যদি এখনই পদক্ষেপ না নেয়, তাহলে সমাজের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এই কর্মীরা আর্থিক অনিশ্চয়তার মধ্যে থেকে যাবেন।
👉 এখন সময় এসেছে সরকারকে এগিয়ে আসার।
অনারিয়াম নয়, এবার বেতন চাই। সম কাজ সম বেতন চাই।